ভ্রাতৃত্ব

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - আখলাক | | NCTB BOOK

পরিচয়
উয়াত শব্দের আভিধানিক অর্থ ভ্রাতৃত্ব। পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার সম্পর্ককে ভ্রাতৃত্ব বলে।
মানুষের মাঝে এ হৃদ্যতা ও আন্তরিকতা বিভিন্নভাবে গড়ে ওঠে।

ভ্রাতৃত্বকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে—

১. ঔরসজাত ভ্রাতৃত্ব, ২. বিশ্বভ্রাতৃত্ব এবং ৩. ইসলামি ভ্রাতৃত্ব।

ঔরসজাত ভ্রাতৃত্ব একই পিতার ঔরসে বা একই মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করার কারণে যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হয় তাকে ঔরসজাত ভ্রাতৃত্ব বলে।

বিশ্বভ্রাতৃত্ব
পৃথিবীর সকল মানুষের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ.)। এ কারণে বিশ্বের সকল মানুষই ভাই ভাই। ধীরে ধীরে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আবহাওয়া এবং ভৌগোলিক পরিবেশের কারণে মানুষের আকার-আকৃতি, স্বভাব-প্রকৃতি এবং বর্ণ ও ভাষার মধ্যে ভিন্নতা দেখা দেয়। আর এভাবে মানুষ বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে । তবু তারা পরস্পর ভাই ভাই। কারণ তারা সবাই এক আদম (আ.) হতে সৃষ্টি । মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থ : “হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারে।” (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১৩)

রাসুল (স.) বলেছেন, “তোমরা প্রতেকেই আদম (আ.) হতে এবং আদম মাটি হতে সৃষ্টি ।” (বুখারি)

এ আয়াত ও হাদিসের পরিপ্রেক্ষিতে সকল মানুষ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।

ইসলামি ভ্রাতৃত্ব
আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম, ইসলামের মূলবাণী-আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই হযরত মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল। যারা এই কালিমায় বিশ্বাসী তারা যেকোনো বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও অঞ্চলের অধিকারী হোক না কেন, তারা ইসলামি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

অর্থ : “নিশ্চয়ই মুমিনগণ ভাই ভাই ।” (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১০)

হাদিসে রাসুল (স.) বলেন,

অর্থ: “মুসলমান মুসলমানের ভাই ।” (বুখারি ও মুসলিম)

ইসলামি ভ্রাতৃত্বের তাৎপর্য
ইসলামের দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান। ইসলামে উঁচু-নিচু, সাদা-কালো, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর বিশ্বের সকল মুসলমান পরস্পরের ভাই। একই দীনসূত্রে আবদ্ধ। মহানবি (স.) বলেন, “অনারবগণের উপর যেমন আরবগণের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তেমনি আরবগণের উপরও অনারবগণের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।” ইসলামি ভ্রাতৃত্ব এতই সুদৃঢ় যে, আল্লাহর রাসুল (স.) পৃথিবীর সকল ইমানদারগণকে একটি দেহের সাথে তুলনা করেছেন । দেহের কোনো একটি অঙ্গে অসুখ হলে যেমন পুরো দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তেমনি পৃথিবীর কোনো একপ্রান্তে একজন মুসলিম বিপদে পতিত হলে সকল মুসলমানের অন্তর ব্যথিত হয়। কোনো মুসলমান ভাইকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। এমনকি যদি কখনো পরস্পরের মধ্যে কোনো কলহ সৃষ্টি হয় তখন অপর মুসলমান ভাইয়েরা তা মিটিয়ে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। কোনো মুসলমান নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অপর মুসলমান ভাইয়ের জন্যেও তা পছন্দ করবে অন্যথায় সে প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে না। প্রিয় নবি (স.) বলেন, “মুমিনগণ পরস্পর মিলে একটি ইমারতস্বরূপ, এর এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে রাখে।” (বুখারি ও মুসলিম)

আমরা পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ থাকব । সুখে-দুঃখে একে অপরের সঙ্গে শরিক থাকব।

কাজ : শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ইসলামি ভ্রাতৃত্বের সুফলগুলো লিখে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে দেখাবে।
Content added By
Promotion